সুন্দরবনের কুমির ঘুরছে বরিশালের নদীতে।
- আপডেট সময় : ০৫:৪৬:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪ ১২৭ বার পড়া হয়েছে
কুমিরের আচরণ ও গতিবিধি জানতে সম্প্রতি চারটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো। এর মধ্যে তিনটি সুন্দরবনের বিশাল এলাকায় চলে যায়। তবে একটি কুমির বন ছেড়ে মংলা, বাগেরহাট, মোড়েলগন্জ হয়ে এখন পিরোজপুরে ঢুকে পড়েছে।মাত্র এগারো দিনে প্রায় একশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি। গায়ে বসানো স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে কুমিরটি বুধবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার তুষখালির একটি নদীতে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশা, নির্দিষ্ট সময় পর হয়তো আবারো সুন্দরবনে ফিরে আসতে পারে কুমিরটি। তবে আপাতত সে তার নিজের জন্য নিরাপদ পরিবেশ খুঁজছে।
১৬ মার্চ স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে কুমিরটি অবমুক্ত করা হয়েছিলো সুন্দরবনের হারবাড়িয়া পয়েন্টে। এরপর এটি মংলা, রামপাল, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ হয়ে পিরোজপুরে ঢুকেছে।
বন বিভাগ বলছে, এই গবেষণার মাধ্যমে সুন্দরবনের কুমিরের চলাচল ও গতিপথ সম্পর্কে তারা জানতে চায়।
বন সংরক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ইমরান আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমরা মূলত এই গবেষণার মাধ্যমে তাদের আচরণ ও বসবাসের পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করেছি। যে কুমিরটি বনের বাইরে গেছে সে হয়তো তার বসবাসের জন্য সুবিধাজনক জায়গা খুঁজছে”।
কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে, জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিআইজেড)।
আইইউসিএন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সুন্দরবনের কুমির কোথায়, কিভাবে বিচরণ করে তা নিয়ে বিস্তারিত কোন গবেষণা হয় নি। সে কারণেই স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে এই গবেষণাটি করা হচ্ছে”।
বিশ্বে পাখি, কচ্ছপ, নেকড়েসহ বিভিন্ন প্রাণীর শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে তাদের আচরণ নিয়ে গবেষণার নজীর রয়েছে। তবে বাংলাদেশের কুমির নিয়ে এভাবে গবেষণা এই প্রথম করা হচ্ছে।
গত ১৩ থেকে ১৬ই মার্চের মধ্যে মোট চারটি লোনা পানির কুমিরে এই স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো হয়। এই চারটি কুমিরের মধ্যে দুটি পুরুষ এবং দুইটি স্ত্রী কুমির।
এদের মধ্যে পুরুষ কুমির জুলিয়েট সুন্দরবনের করমজলে অবস্থিত দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পুকুরে ছিল। আর স্ত্রী কুমির মধুকে সম্প্রতি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ির মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া বাকি দুটি কুমির ফাঁদ পেতে ধরা হয় সুন্দরবনের খাল থেকে। এই মোট চারটি কুমিরে স্যাটেলাইট ট্যাগ স্থাপন করে ছেড়ে দেওয়া হয় সুন্দরবনের খালে।
এই কাজের জন্য আইইউসিএন বাংলাদেশ নিয়ে আসে কুমির গবেষক ড. সামারাভিরা ও পল বেরিকে। তারা দু জন অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছিলেন।আইইউসিএন এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সারোয়ার আলম দীপু বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই গবেষক টিমের পরিকল্পনা ছিল মোট পাঁচটি কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসানো। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করি আমরা”।
তবে শেষ পর্যন্ত একটি বাদে মোট চারটি কুমিরের গায়ে বসানো হয় স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার।