পৃথিবীর দরিদ্র্যতম দেশ
বিশ্বের দরিদ্র্যতম রাষ্ট্র-বুরুন্ডি
- আপডেট সময় : ০৮:৪৫:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
পৃথিবী’তে মোট ২৩১টি রাষ্ট্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো ভিন্ন। অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানদন্ডে একেকটি রাষ্ট্রের অবস্থান একেক রকম। কোন কোন রাষ্ট্র উৎপাদনশীলতায় শীর্ষে থেকে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে পরিপূর্ণ ভাবে সফল হয়। আবার কোন কোন দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এতোটাই ভঙুর ও নাজুক হয় যে, নিজ দেশের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বৈশ্বিক অর্থনীতি’র সূচকে বিশ্বের সবগুলো রাষ্ট্রকে ভিন্ন ভিন্ন রুপকে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেমন- ধনী, উন্নত, উন্নয়নশীল, দরিদ্র্য ইত্যাদি।
বুরুন্ডির জনসংখ্যা ১৩ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৩০ লাখ। দেশটি আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। ১৯ শতকের শেষার্ধ থেকে প্রথমে জার্মান, তারপর বেলজিয়ান উপনিবেশ হওয়ার পর বুরুন্ডি ১৯৬২ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্রতম দেশটির ভৌগোলিক অবস্থা প্রায় পুরোটাই স্থলবেষ্টিত। শিক্ষার সুযোগের অভাব এবং এইচআইভি/এইডসের বিস্তারের কারণে দেশে দরিদ্রতা বিস্তার করে আছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৮০% দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। বিংশ শতাব্দিতে দেশজুড়ে বিরাট দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।
মাথাপিছু জিডিপি হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ বুরুন্ডি। দেশটির মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৩০৮ মার্কিন ডলার। বুরুন্ডির মাথাপিছু আয় মাত্র ১৮০ মার্কিন ডলার। বুরুন্ডিতে মাত্র ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। ধারণা করা হয়, এদেশে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন মানুষ বেকার। এখানে এমনও কিছু পরিবার আছে যাদের মাসিক আয় ১০-১৫ ডলার এবং এই সীমিত আয় দিয়েই পুরো পরিবারের এক মাস চলতে হয়।
মাথাপিছু গ্লোবাল জিডিপি প্রতিবছর বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৩ সালের জন্য বিশ্বব্যাপী গড় জিডিপি ধরেছে ১৩ হাজার ৯২০ মার্কিন ডলার। বিশ্বের ২৫টি দেশের মাথাপিছিু জিডিপি একেবারেই কম। এ দেশগুলোর অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক নিচে।
অন্য ২৪টি দেশ হলো-সিয়েরা লিওন (৪৭২ ডলার), মালাউই (৪৮৩), মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (৫১৬), মাদাগাস্কার (৫৪০), সোমালিয়া (৫৬২), দক্ষিণ সুদান (৫৭০), নাইজার (৫৭৪), মোজাম্বিক (৫৭৯), ইরিত্রিয়া (৭০০), কঙ্গো (৭০৪), চাদ (৭৫৫), লাইবেরিয়া (৭৭০), বুরকিনা ফাসো (৩৩২), ইয়েমেন (৮৭২), গিনি-বিসাউ (৮৭৪), মালি (৮৭৭), গাম্বিয়া, (৮৮৩), সুদান (৯৩০), রুয়ান্ডা (৯৬৮), তাজিকিস্তান (১০৫০), উগান্ডা (১১৬৪), মিয়ানমার (১১৭৩), লেসেঙ্গো (১২০৯), ইথিওপিয়া (১২২৭)।
দেশটি গত ৫০ বছরে বারবার গৃহযুদ্ধের মুখে পড়েছে। দেশটিতে রয়েছে উচ্চ স্তরের দুর্নীতি। তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রভাব উল্লেখ করে আইএমএফ দেশটির অর্থনীতিকে ইতিবাচক প্রবণতার তালিকায় রেখেছে।
বৈশ্বিক সম্পদ বৈষম্যের তুলনামূলক পয়েন্ট হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ লুক্সেমবার্গের মাথাপিছু জিডিপি বুরুন্ডির প্রায় ৪১৫ গুণ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সর্বনিম্ন মাথাপিছু জিডিপির অধিকারী সিয়েরা লিওন ও মালাউইর জিডিপি বুরুন্ডির থেকে প্রায় ২০০ ডলার বেশি।
এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত, প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত। বুরুন্ডির শিশুরা পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের শিশুদের মতো রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক অধিকার পায় না। দারিদ্র্যের ভয়াবহ থাবা তাদের শৈশব এবং কৈশরের উচ্ছ্বলতা এবং স্বাভাবিক বিকাশে প্রধান অন্তরায়।
বুরুন্ডির অধিকাংশ মানুষ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সুযোগ পায় না। বিদ্যুৎ না হলে আমাদের চলে না, আমরা এক মিনিটের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়া থাকতে পারিনা। কিন্তু বুরুন্ডিতে মাত্র ৭.৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পান আর ‘ইন্টারনেট’ কি সেটাই হয়তো অনেকে জানেন না । এখানে আধুনিকতার ছোঁয়া নেই বললেই চলে। স্মার্টফোনের যুগেও বুরুন্ডির মানুষ সাধারণ বাটন ফোন ব্যবহার করেন, যে ফোনে শুধু কল করা আর টাইম দেখা ছাড়া বেশি কিছু নেই।