প্রধান উপদেষ্টাকে খোলা চিঠি
প্রধান উপদেষ্টা বরাবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের খোলা চিঠি
- আপডেট সময় : ০৬:০৪:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে খোলা চিঠি
সম্মানিত প্রধান উপদেষ্টা,
আসসালামু আলায়কুম স্যার । আপনাকে এবং আপনার উপদেষ্টা পরিষদকে আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানাতে চাই মেয়াদের দুই মাস পূর্তিতে ৷
আপনি মাসে একটা চিঠি লিখতে বলেছেন সাধারণ মানুষকে। জানিনা এ চিঠি আপনার দৃষ্টি গোচর হবে কি না। তবুও সাহস করে লিখছি, ভুল হলে মার্জনা করবেন মেহেরবানী করে ৷ কেউ একজন এই প্রথম ক্ষমতার শীর্ষে বসেও আমাদের কথা শুনতে চেয়েছেন, বহুকালের দুঃশাসন আর দম বন্ধ হওয়া পরিবেশ কাটিয়ে এটাই আমাদের সাফল্য বলে মনে করি।
১: প্রথমেই বলতে চাই জুলাই, ২৪ বিপ্লবের কথা, যেখানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, রিকসাচালক, দিনমজুর, শিশু-বৃদ্ধসহ সকল সাধারণ জনতা ৷ সকলের মনের আকাংখা ছিল দীর্ঘ দিনের চলমান বৈষম্য, অনিয়ম, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে ঐসবের অবসান করা এবং দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করে সুন্দর সমাজ ও জীবন গড়া ৷ আমরা সকলে মহান আল্লাহর রহমতে সেটি করতে পেরেছি ৷ কিন্তু সাধারন মানুষের বড় চাওয়া দ্রব্য মূল্যের হ্রাস এবং চাঁদাবাজি বন্ধ এখনো অধরাই থেকে গেছে ৷ বাজার সিন্ডিকেটের কাছে সবাই এখনো অসহায় ৷ আপনি দয়া করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে গরীব মানুষের একটু ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকায় সহযোগিতা করুন ৷ জাতীয় মাছ ইলিশের কথা নাইবা বললাম ৷
২: ছাত্ররা এই দেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী, কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিগত এক যুগ ধরে তারা বৈষম্যের স্বীকার৷ মেধাকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন কোটার মাধ্যমে অযোগ্যদের চাকুরী দিয়েছে বিগত সরকার ৷ কি ছিলোনা সেখানে, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁস এমনকি একটি বিশেষ এলাকার কোটা ৷ সাধারণ গরীব মানুষের মেধাবী সন্তানের হয়নি একটি চাকরি, কি যে বুকফাটা আর্তনাদ তাদের তা শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন ৷ তাইতো তারা সবাই সেদিন রাজপথে গলাফাটিয়ে বলেছিল ,” কোটা নয়, মেধা মেধা”৷ তাদের চেষ্টা সফল হয়েছে, বাংলাদেশে নতুন দিনের সূচনা হয়েছে আপনার হাত ধরে ৷ তাই সবিনয় অনুরোধ, সকল পদে যেন মেধাবীরা নিয়োগ পাই সেই ব্যবস্থা আপনাকে করতে হবে ৷ পি.এস. সি সহ সকল প্রতিষ্ঠান সংস্করণ করতে হবে, যেন সেখানে কেউ আবেদ আলীদের দিয়ে সাধারন মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে ৷
৩: শিক্ষক হলো জাতি গড়ার কারিগর। আপনি নিজেও একজন অত্যন্ত সফল ও প্রোথিতযশা শিক্ষক ৷ আপনার জ্ঞান, প্রজ্ঞায় অভিভূত শুধু দেশই নয়, সারা বিশ্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের দেশে শিক্ষকদের মান সম্মান এবং মর্যাদা দিন দিন অধঃপতিত ৷ অবকাঠামোগত ঝলকে চোখ ঝলসে গেলেও শিক্ষার মূল উপাদান শিক্ষকদের এই রাষ্ট্র অবজ্ঞা অবহেলা করেছে আজন্ম, বিশেষ করে বিগত সরকারের সময়ে সেটি গতি পেয়েছিল অনেক বেশি। এটার জরুরি অবসান হতে হবে দেশের প্রয়োজনে ৷ কারন, শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করে কোন দেশ, জাতি উন্নতি করতে পারেনা ৷ যেসব দেশ উন্নত ও সভ্য, সেখানে শিক্ষকদের মূল্যায়ন ও গুরুত্ব অনেক বেশি যেটি বলার অপেক্ষা রাখেনা ৷ কারন, আপনি অনেক বেশি জানেন এ বিষয়ে ৷ তাই আকুল আবেদন, দয়াকরে শিক্ষকদের যোগ্য মর্যাদার আসনে স্থান দিন এবং তার ব্যবস্থা করুন৷
৪: আরেকটি বিষয় না বলেই পারছি না ৷ যেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন, সেটি যেন কোনভাবেই আর ফিরে না আসে ৷ সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভি.সি নিয়োগ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে লক্ষ্য করলে অনেকের কাছে প্রতিয়মান হয় যে, একটি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয় কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে ৷ এটি মোটেও কাম্য নয় ৷ কারন, চাকরিতে নিয়োগের বেলাই বাংলাদেশর কোন ছাত্র যেন অধিকার না হারায় অথবা কেউ বাড়তি সুবিধা না পায় ৷ অবশ্য এ বিষয়ে আপনার নিকট অনুরোধ, যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষককে যোগ্য জায়গায় স্থান দিন ৷
৫: একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো শেয়ার বাজার ৷ আপনাকে এই বিষয়ে কিছু বলা আমার জন্য অনেক কঠিন হবে, কারন আপনি অর্থনীতির শিক্ষক ৷ বিগত এক যুগের ও বেশি সময় ধরে দেশের মানুষ তাদের সহায় সম্বল বিনিয়োগ করে রাস্তার ফকির হয়েছে ৷ অনেকে নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছে সহ্য করতে না পেরে ৷ ওখানে কিছূ অসাধু লোক জুয়ার আসর বানিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করে ৷ আপনি দয়াকরে এটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন এবং দেশের অর্থনীতি ও মানুষকে মুক্ত করুন ৷
পরিশেষে, একটি রক্ত স্নাত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বদেশকে পেয়েছি নতুন করে। এই নতুন মানবিক দেশ গড়ার দায়িত্ব আমরা তুলে দিয়েছি আপনার হাতে। নতুন রেনেসাঁ যুগে তাই আপনার নিকট আবেদন, ভালোর সাথে যেন আমরা সবসময় থাকি এবং এই দেশকে আপনি সুন্দর ও বৈষম্যহীন করে গড়বেন ৷ আমাদের সকলের আশা যেন এই দেশ মেধাবীদের জন্য তীর্থ স্থান হয় ৷ আপনার দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য সফলতা কামনা করছি।
নিবেদনে,
প্রফেসর ড. মো. সোহেল হাসান
প্রানরসায়ন ও অণুপ্রান বিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়