ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রেন আগামী মাসেই

আগামী মাসেই ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রেন

Mazhar Islam
  • আপডেট সময় : ০৪:০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪ ৫১ বার পড়া হয়েছে
Spread the love

বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিট প্রকল্পের অংশ হিসাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হচ্ছে আগামী মাসেই। গত শনিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মোট ১০ টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

সমঝোতা স্মরক স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

বৈঠক শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডকে ব্যবহার করে ভারতের একটা অংশ থেকে ভারতেরই আরেকটা অংশে রেলওয়ে সংযোগ চালু করতে দুই নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ট্রানজিট চালুর পর ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের দশর্না দিয়ে প্রবেশ করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করবে। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী মাসেই বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের রেল চলবে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় রেল ট্রানজিটের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে দাবি করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী। বর্তমান পদ্ধতিতে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। বাংলাদেশি চালক তা চালিয়ে আনেন। ফেরার সময়েও একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য ভারতের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দেশটির এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ট্রেন নিতে চায়।
ভারত এর আগে প্রস্তাব দিয়েছিল, পরীক্ষামূলক যাত্রার পণ্যশূন্য রেলগাড়ি ভারতের গেদে থেকে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় আসবে। সেখান থেকে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারী সীমান্তবর্তী চিলাহাটী স্টেশন হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনে যাবে।

বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট রুট

শনিবার দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, রেলওয়ে ট্রানজিট ইস্যুটা দুই দেশের নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, “এই ট্রানজিট চালু হলে নিজ দেশের মধ্যে রেলপথে দূরত্ব অনেকখানি কমবে ভারতের। ভারত আগে থেকেই এটা চেয়েছিল। এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তারও একটি পরিকল্পনা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে”। এর ফলে গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে থেকে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটকে সংযুক্ত করা হবে।

এই ট্রানজিট চালু করতে নতুন রেলপথ নির্মাণ হবে নাকি যেটি আছে সেটিকে সংস্কার করা হবে সেটি পরিস্কার করেননি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন  কোয়াত্রা বলেছেন, এই ট্রানজিট চালু হলে এটা উভয় দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

ট্রেন চালুর ঘোষণায় রোববার আনন্দ মিছিল করে রাজশাহীবাসী

শনিবার বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা রুটে ট্রেন চালু করতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয়।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগে সচল আটটি রুট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০০৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চালু হয় দর্শনা-গেদে রুট। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরো চারটি বন্ধ রুট সচল হয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি রুট সচল করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে নতুন করে আরো দুটি রুট তৈরির উদ্যোগ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রেল ট্রানজিট সুবিধা পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের কাছে মূলত ট্রানজিট সুবিধা চেয়েছে ভারত। এ-সংক্রান্ত কোনো ধরনের চুক্তি করার আগে বাংলাদেশ যেন মুনাফার ন্যায্য ভাগ পায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। অন্যদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রানজিট নয়, এমওইউর মূল বিষয়বস্তু হলো আন্তঃদেশীয় কানেক্টিভিটি বা সংযোগ। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্যই এমওইউ সই করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রেন আগামী মাসেই

আগামী মাসেই ভারতের পরীক্ষামূলক ট্রেন

আপডেট সময় : ০৪:০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪
Spread the love

বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে ভারতের রেল ট্রানজিট প্রকল্পের অংশ হিসাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হচ্ছে আগামী মাসেই। গত শনিবার ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মোট ১০ টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

সমঝোতা স্মরক স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

বৈঠক শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডকে ব্যবহার করে ভারতের একটা অংশ থেকে ভারতেরই আরেকটা অংশে রেলওয়ে সংযোগ চালু করতে দুই নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ট্রানজিট চালুর পর ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের দশর্না দিয়ে প্রবেশ করে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারত প্রবেশ করবে। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী মাসেই বাংলাদেশ দিয়ে ভারতের রেল চলবে।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় রেল ট্রানজিটের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে ফলপ্রসূ বলে দাবি করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ-ভারত ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী। বর্তমান পদ্ধতিতে ভারতীয় ট্রেন সীমান্তে আসার পর বাংলাদেশি ইঞ্জিনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে। বাংলাদেশি চালক তা চালিয়ে আনেন। ফেরার সময়েও একই রকম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য ভারতের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দেশটির এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ট্রেন নিতে চায়।
ভারত এর আগে প্রস্তাব দিয়েছিল, পরীক্ষামূলক যাত্রার পণ্যশূন্য রেলগাড়ি ভারতের গেদে থেকে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় আসবে। সেখান থেকে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারী সীমান্তবর্তী চিলাহাটী স্টেশন হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী স্টেশনে যাবে।

বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট রুট

শনিবার দুই দেশের সরকার প্রধানের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, রেলওয়ে ট্রানজিট ইস্যুটা দুই দেশের নেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, “এই ট্রানজিট চালু হলে নিজ দেশের মধ্যে রেলপথে দূরত্ব অনেকখানি কমবে ভারতের। ভারত আগে থেকেই এটা চেয়েছিল। এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তারও একটি পরিকল্পনা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে”। এর ফলে গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে থেকে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটকে সংযুক্ত করা হবে।

এই ট্রানজিট চালু করতে নতুন রেলপথ নির্মাণ হবে নাকি যেটি আছে সেটিকে সংস্কার করা হবে সেটি পরিস্কার করেননি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন  কোয়াত্রা বলেছেন, এই ট্রানজিট চালু হলে এটা উভয় দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

ট্রেন চালুর ঘোষণায় রোববার আনন্দ মিছিল করে রাজশাহীবাসী

শনিবার বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা রুটে ট্রেন চালু করতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয়।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগে সচল আটটি রুট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০০৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চালু হয় দর্শনা-গেদে রুট। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরো চারটি বন্ধ রুট সচল হয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি রুট সচল করার পাশাপাশি নেয়া হয়েছে নতুন করে আরো দুটি রুট তৈরির উদ্যোগ। এরই মধ্যে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রেল ট্রানজিট সুবিধা পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের কাছে মূলত ট্রানজিট সুবিধা চেয়েছে ভারত। এ-সংক্রান্ত কোনো ধরনের চুক্তি করার আগে বাংলাদেশ যেন মুনাফার ন্যায্য ভাগ পায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। অন্যদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রানজিট নয়, এমওইউর মূল বিষয়বস্তু হলো আন্তঃদেশীয় কানেক্টিভিটি বা সংযোগ। ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্যই এমওইউ সই করা হবে।